জয় গৌর-জয় জগদ্বন্ধু
জয়পুরধামে শ্রীশচী জননী অঙ্গন প্রতিষ্ঠা

শ্রীশ্রীগৌর ভক্তজনবৃন্দের সেবক আমরা কতিপয় সজ্জন বাহির হইয়াছি গৌর পরিক্রমায়। শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য পঞ্চশতবর্ষ জন্মজয়ন্তী পরিষদের নির্দেশে। আর দুই বৎসর পর মহাপ্রভুর আবির্ভাবের পঞ্চশতবর্ষ পূর্ণ হইবে। এই পরিক্রমা তাহার প্রস্তুতি পর্ব। পরিক্রমার একটি প্রধান অংশ গৌরগণের পদাঙ্কিত শ্রীতীর্থের উজ্জ্বলতার বিধান। সুনামগঞ্জ মহকুমা বর্তমানে একটি জেলা। সুনামগঞ্জ মহকুমার নবগ্রামে অদ্বৈত আবির্ভাবতীর্থে নূতন মন্দির ও ভোগমন্দির এবং আবাস লক্ষাধিক টাকা ব্যয়ে নির্মিত হইয়াছে। পঞ্চখন্ডে শ্রীবাসদেবমন্দির পার্শ্বে শ্রীবাস পন্ডিতের স্মৃতিপ্রস্তর স্থাপিত হইয়াছে।

অদ্য ১৯ ফাল্গুন শুক্রবার (৪.৩.৮৩) আমরা আসিয়াছি জয়পুর গ্রামে। এই গ্রামে পন্ডিত নীলাম্বর চক্রবর্তীর গৃহ ছিল। ইহা বহুদিনের ঐতিহ্য। চক্রবর্তী মহাশয় শচীদেবীর জনক। সুতরাং এই জয়পুর গ্রাম শচীদেবীর জন্মভূমি।

কয়েক শত ভক্ত সঙ্গে মধুর হরিনাম কীর্তন করিতে করিতে আমরা জয়পুর গ্রামে প্রবেশ করিলাম। যেস্থানে আমরা স্থিত হইলাম সেস্থানে একটি ক্ষুদ্র কুটিরে দেখিলাম-শচী জননীর ক্রোড়ে শিশু নিমাই এক মনোহরী বিগ্রহ। নিকটে এক বৃদ্ধ ব্রাহ্মণের বিগ্রহ মূর্তি মনে হইল নীলাম্বর চক্রবর্তী দন্ডায়মান হইয়া আমাদিগকে বলিতেছেন এই আমার বাস্তুভিটা। মাতৃকোলে নিমাইয়ের মূর্তি ধ্যানে সুদৃঢ় অনুভূতি জাগিল এই স্থানই শচী জননীর জন্মস্থান ইহা মহাতীর্থভূমি। তখন বিরাট জনসভার সন্মৃখে বলিলাম শ্রীশ্রীগৌরসুন্দর জগদ্বন্ধুসুন্দরের শ্রীপাদপদসেবী ভৃত্য আমি মহানামব্রত দাস জনতা সমক্ষে এই ঘোষনা করিতেছি

“শচীগর্ভ সিন্ধু মাঝে চন্দ্রের প্রকাশ পাপতাপ দূরে গেল তিমির বিনাশ।। যাঁহার আগমনে সংসারের সর্ববিধ তিমির বিনাশপ্রাপ্ত সেই গৌরচন্দ্র যাঁহার গর্ভসিন্ধুতে আবির্ভূত তিনি অভি্ন্ন যশোধা শ্রীশ্রীশচীদেবী। এই তাঁহার জন্মভূমি। এই তীর্থস্থানে মন্দিরাদি করিয়া আমরা উজ্জ্বল করিব এই সংকল্পে এই স্থানে ভিত্তি স্থাপন করিলাম। অদূর ভবিষ্যতে জগতের নরনারী আসিয়া এই মহাতীর্থ শির লোটাইবে। এই লুপ্ত তীর্থ প্রকট করিবার ভাগ্য পাইয়া আমরা কৃতার্থ হইলাম। এই শচীদেবীর লীলামন্ডল শ্রীমঙ্গল হইতে হবিগঞ্জ পর্যন্ত বিস্তৃত”।

ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে শত শত নর নারী ধামের উজ্জ্বলতা বিধানকল্পে অর্থাদি দিতে লাগিলেন। নগদ ও প্রতিশ্রুতিতে প্রায় পঞ্চাশ হাজার টাকা আসিল। জমির মালিক জমি দানের প্রতিশ্রুতি দিলেন। কেহ ইষ্টক,কেহ সিমেন্ট, কেহ শিল্পকার্যাদি করিবার প্রতিশ্রুতি দিলেন। জমির মূল্য ধরিলে মোটামুটি প্রায় আশি হাজার টাকার ব্যবস্থা হইয়া গেল। নগদ টাকা ও যাহারা প্রতিশ্রুতি দিয়াছেন তাদের নামের লিস্ট একটি কমিটির হস্তে ন্যস্ত করা হইল। গৌরপূর্ণিমার দিন তাহারা মন্দিরের কার্য আরম্ভ করিবেন এইরুপ নির্দেশ রহিল। সহস্র সহস্র নর-নারীর সম্মতিক্রমে নিম্নলিখিত কমিটি গঠিত হইলঃ

  • ০১। ডা.শ্রী গোপেশ চন্দ্র বিশ্বাস-সভাপতি (হবিগঞ্জবাসী)
  • ০২। শ্রী ক্ষিতিশ চন্দ্র দেব চৌধুরী-(হবিগঞ্জবাসী)
  • ০৩। অধ্যাপক শ্রী নিখিল চন্দ্র ভট্টাচার্য-সম্পাদক (হবিগঞ্জবাসী)
  • ০৪। শ্রী উমাপদ ভট্টাচার্য-সহসম্পাদক (জয়পুরবাসী)
  • ০৫। সত্যেন্দ্র কুমার রায়-কোষাধ্যক্ষ (শ্রীমঙ্গলবাসী)
  • ০৬। শ্রী গোপাল দেব চৌধুরী-সদস্য (শ্রীমঙ্গলবাসী)
  • ০৭। শ্রী গোপাল চক্রবর্তী-সদস্য (জয়পুরবাসী)
  • ০৮। শ্রী নিরোদ চন্দ্র দেব-সদস্য (জয়পুরবাসী)
  • ০৯। শ্রী যতীন্দ্র দেব- সদস্য (সাটিয়াজুরীবাসী)
  • ১০। শ্রীরাধাবল্লভ দেব-সদস্য (ভূগলীবাসী)
  • ১১। শ্রী সুশীল চন্দ্র সাহা-সদস্য (মিরপুরবাসী)

কমিটির সভ্য সংখ্যা বাড়াইয়া লইবার অধিকার কমিটির থাকিল। কমিটিকে নির্দেশ দেওয়া হইল সকল গৌরভক্তগণের সঙ্গে মিলিত হইয়া অর্থ সংগ্রহ করিয়া গৃহস্থদের নিকট হইতে ধান্য সংগ্রহ করিয়া গৃহে গৃহে মুষ্টি চাউল সংগ্রহ করিয়া বৎসর কাল মধ্যে শ্রীশ্রীশচীমাতার শ্রীমন্দির ও নাটমন্দির নির্মাণ করিতে হইবে। শ্রীশ্রীগৌরহরি কৃপা করিয়া আমাদিগকে শক্তি দান করিয়া তাঁহার কার্য তিনি সমাধান করাইয়া লইবেন। আমরা ক্ষুদ্রজীব-উপলক্ষ মাত্র।

১৯ ফাল্গুন শুক্রবার ১৩৮৯
৪ মার্চ ১৯৮৩

ভক্তদাসানুদাস
মহানামব্রত ব্রহ্মচারী
জয়পুরধাম-শ্রীশচীঅঙ্গন